অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দলের আশঙ্কা নিয়ে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নির্দলীয় নির্বাচন করার কথা ভাবছে ক্ষমতাসীন সরকার।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট কয়েকজন নেতা এ ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, আসন্ন সংসদ অধিবেশনে এ সংক্রান্ত আইনের সংশোধন করা হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর একজন নেতা তার নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে বলেন যে, আগামী মার্চ-এপ্রিলে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই নির্বাচন নিয়ে বিকল্প চিন্তা ভাবনা চলছে। তাই নির্ধারিত সময়ে ওই নির্বাচন না হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সময় পিছিয়ে দিয়ে এই বছরের মে-জুন মাস থেকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নির্দলীয় করার লক্ষ্যে আইনি জটিলতা দূর করা হবে। এসময় তিনি আরও বলেন, তার জানামতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও সরকারের সাথে এই ব্যাপারে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, এই নির্বাচনকে ঘিরে স্থানীয় সরকার দলে দলে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও বিদ্রোহ দমন করতে সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থান করলেও কোনো প্রকার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকলে পৌরসভা ও উপজেলা নির্বাচনের চেয়ে এখানে চারগুণ বেশি বিদ্রোহী থাকার আশঙ্কা করা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় কড়া নজরদারির মধ্যে থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য বলেন, যদি আইনি জটিলতা দূর করা অসম্ভব হয় তাহলে এমনও হতে পারে যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন যেভাবে খোলা রাখা হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও সেভাবে নিয়ম কানুন অনুসরণ করা হতে পারে।
নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এ ধরনের কথাবার্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে অন্য নেতারা বলেন যে, এ ব্যাপারটি সম্পর্কে আমাদের পুরোপুরি ধারণা নেই। তবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নির্দলীয় নির্বাচনের আয়োজন হলে ভালো হবে, বেঁচে যাই।
গতকাল গুরুত্বপূর্ণ এক নেতার অফিসে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে এলাকার নেতারা কথা বলতে এলে তিনি ওইসব নেতাদেরকে বলেন যে, এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে নাও হতে পারে।
এই সম্পর্কে আরও জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলে আমরা যারা সংসদ সদস্য তারা বেশ ঝামেলায় পড়ি । আগামী সংসদ অধিবেশনে এই সম্পর্কে আইনি জটিলতা দূর করার প্রস্তাবনা হতে পারে।
এই প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশনের সচিবালয় হতে এখনো নির্বাচন পেছানোর ব্যাপারেবকোনো কিছু উপস্থাপন করা হয়নি। যখনই উপস্থাপন করা হবে তখনই আমরা দেখতে পাবো। জেনেশুনে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কোনো দলীয় প্রতীকে হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন যে, এটা তো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিষয়। বর্তমানে বাংলাদেশে যে আইন প্রচলিত আছে তাতে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ার কথা । যদি আইন পরিবর্তন করা যায় তবে দলীয় প্রতীকে হবে না।
ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ এর সভাপতিমন্ডলী, সম্পাদকমন্ডলীর একাধিক সদস্য বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন পরিবর্তন করার মাধ্যমে ২০১৬ সাল থেকে স্থানীয় সব নির্বাচনই দলীয় প্রতীকে শুরু করা হয় । পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে অনুসরণ করে রাজনৈতিক সুফল পাওয়ার আশায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন করে ক্ষমতাসীন সরকার। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে প্রতিহিংসা মুলক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে সেখান থেকে দলকে মুক্ত করে আনতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ দলকে।

0 মন্তব্যসমূহ