পুলিশের কাছে গ্রেফতার হলে করণীয়


গ্রেফতার হলে করণীয়


 গ্রেফতার হলে  কী করবেন?

জেনে নিন!


আজকালকার সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে, আপনার রাষ্ট্র সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা অনেকটা বদলে গিয়েছে। সেই প্রাচীন সময় বা অতীতকালের রামরাজ্য শুধু আজ  পাঠের বই বা গল্প-কবিতার বইয়ে সীমাবদ্ধ। বর্তমান সময়ে ভূরি ভূরি উদাহরণ চারপাশে   যেখানে রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছে। যেখানে সমাজের উচ্চ শ্রেণী হতে মধ্য ও নিম্ন শ্রেণীর মানুষেরা রাষ্ট্র ব্যবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। আজ মানুষ কোনো কারণ ছাড়াই আপনার রাজনৈতিক চিন্তাধারার মত ও আদর্শের পার্থক্যকে কেন্দ্র করে  যখন তখন আপনি বিনা কারণে পুলিশের হেনস্থার শিকার হয়ে যেতে পারেন।


 তাই আজকে আপনাদের জানতে হবে কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশের হেনস্থা বা সোজা কথায় পুলিস আপনাকে গ্রেফতার করলে  আপনি কী কী করবেন। 

আপনি যদি এই বিষয়ে জানেন তাহলে  আপনি অনেক বেশি সচেতন হবেন। আর আপনি নিজে জানতে পারলে অপরকেও জানিয়ে সুনাগরিকের পরিচয় দিতে পারবেন।


আমরা যারা সাধারণ মানুষ আছি তারা সাধারণত আইনের অনেক মারপ্যাচ জানি না বা বুঝতে  পারি না। সাধারণত আমরা কোনো  আইন বিরুদ্ধ কাজে অংশগ্রহণ করি না। কিন্তু তবুও বিভিন্ন চক্রান্তে আপনি যদি পুলিশের হেনস্থার শিকার হন  তাহলে  আপনাকে যা যা করতে হবে। অর্থাৎ এই সম্পর্কে আমাদের আইন আপনার জন্য যেসব অধিকার   সংরক্ষিত করে রেখেছেন তা জেনে নিন...




গ্রেফতার কিভাবে  করা হয়?



কথা অথবা কাজের মাধ্যমে হেফাজতে আত্মসমর্পণ না করলে পুলিশ অফিসার বা গ্রেফতারকারী অন্য ব্যক্তি গ্রেফতার করবার সময় যাকে গ্রেফতার করবে  প্রকৃতপক্ষে তার শরীর স্পর্শ বা আটক করবেন।


আপনি জোর অথবা বলপূর্বক গ্রেফতার প্রতিরোধ করবেন কি?


উত্তর- অবশ্যই না। কারণ ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৬(২) ধারা অনুযায়ী , কোনো ব্যক্তি যদি বলপূর্বক কাউকে গ্রেফতার করার চেষ্টায় বাধা দেয়ার চেষ্টা করে বা গ্রেফতার এড়ানোর চেষ্টা করে, তাহলে পুলিশ অফিসার তার  গ্রেফতারি কার্যক্রম চালনা করার জন্যে প্রয়োজনীয় সকল কাজ করতে পারবেন।


★মহিলাদের শরীর তল্লাশির পদ্ধতি...


ফৌজদারি কার্যবিধির ৫২ ধারার মধ্যে মহিলাদের তল্লাশির পদ্ধতি সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে, যেকোনো মহিলার দেহকে তল্লাশি করবার প্রয়োজন বোধ হলে শালীনতার উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখার মাধ্যমে তা অন্য একজন মহিলা দিয়ে তল্লাশির কাজ করতে হবে।


গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির অধিকার...


বাংলাদেশের সংবিধনের ৩৩(২)নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী :


* কোনো গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে ২৪ ঘণ্টার ভিতরে গ্রেফতারের জায়গা হতে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করতে হবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ ছাড়া এর বেশি সময় আটকিয়ে রাখা যাবে না।


* বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৩(১)নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী  : গ্রেফতার করার কারণ দর্শানো, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি তার মনোনয়ন করা আইনজীবীর সাঙ্গে পরামর্শের সুযোগ প্রদান  করা  ও আত্মপক্ষকে সমর্থন করার অধিকার থেকে কখনো বঞ্চিত করা যাবে না।


*বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৩(৪)নং  অনুচ্ছেদ অনুযায়ী  : কোনো প্রকার অপরাধের দায়ে দায়ী করা ব্যক্তিকে অবশ্যই  নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য কখনোই বাধ্য করা যাবে না।


* অভিযোগের সব কাগজ এর নকল পাওয়া।


* পুলিশ আটক হওয়া ব্যক্তির নিকটাত্মীয়দেরকে গ্রেফতার হওয়ার কারণ ও অবস্থান জানাবে।


ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৪ ধারার অনুসারে পুলিশ কোনো পরোয়ানা ছাড়াই  কাউকে গ্রেফতার  করতে পারে। তবে  অবশ্যই তা  এমন  অপরাধ  হতে হবে যা আমলযোগ্য ।



আসলে আমলযোগ্য অপরাধটা কী?


 ফৌজদারি কার্যবিধি ৪(চ)নং ধারা  অনুসারে  এটি সেই সকল অপরাধ যার জন্য পুলিশ কোনো কারণ বা পরোয়ানা ছাড়াই কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার  করতে পারে। উদাহরণ - ডাকাতি, চুরি,   খুন, রাহাজানি, অপহরণ, ছিনতাই, ইত্যাদি।



যে সমস্থ কারণে পুলিশ কোনো পরোয়ানা ছাড়াই আটক করতে পারে..


*  আমলযোগ্য কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তি অথবা এমন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আছে যা অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে যুক্তিসঙ্গত ।

* আইন সম্পর্কিত  কারণ ছাড়া তার নিকট ঘর ভাঙ্গা যায় এমন কোনো সরঞ্জাম আছে।

* সরকারী ভাবে যাকে অপরাধী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

* চোরাই এর কোনো মালামাল বহন অথবা  তার এই সম্পর্কে কোনো প্রকার  অপরাধ আছে বলে যুক্তিযুক্ত  সন্দেহের কারন আছে।

* কোনো পুলিশের কার্যে বাধা প্রদানকারী বা আইনসঙ্গত হেফাজত হতে পলায়ন বা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা।

* বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী হতে পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তি  হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে এমন।

* বাংলাদেশের বাহিরে কোনো প্রকার  অপরাধে জড়িয়েছেন, যা বাংলাদেশের আইনেও সেটি অপরাধ বলে চিহ্নিত।

* গ্রেফতার করার জন্য যাকে  অন্য পুলিশ এর কাছ হতে অনুরোধ পাওয়া গেছে।

* বাসস্থান ও নাম  জানাতে অস্বীকার করলে ।

* কোনো ভবঘুরে  বা প্রফেশনাল  চোর অথবা ডাকাত হলে।




★পুলিশ গ্রেফতার করলে কী করবেন?:


—পুলিশের কাছে নাম, ঠিকানা ও পেশাসহ  পরিচয় দিতে হবে।


—আপনি যদি পেশজীবি অথবা ছাত্র হন তাহলে আপনার পরিচয়পত্র প্রদর্শন করা যেতে পারে। এই কারণে সবসময় আপনার পরিচয়পত্র সাথেই রাখা দরকার।


—এই রকমের পরিস্থিতির জন্যে প্রস্তুতি নেওয়ার অংশ হিসেবে পরিচিত কোনো আইনজীবির মোবাইল বা ফোন  নম্বর সাথে রাখতে পারেন  এবং গ্রেফতার হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব আইনজীবিকে বিষটি জানানোর  চেষ্টা করা উচিত। অন্তত কোনো আত্নীয় বা ফ্রেন্ডকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা উচিত।



—ঢাকার মধ্যে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে আটক হলে মিন্টো রোড এর ডিবি পুলিশের  অফিসে নেয়া হয়, আর যেকোনো থানা পুলিশের কাছে আটক হলে সংশ্লিষ্ট থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।


— কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার পর  লকআপে রাখবার পূর্বে তার দরকারি  জিনিসপত্র যেমন, মোবাইল, কাগজ,  ফোন, টাকা-পয়সা ও ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি থাকলে তার নিকট  হতে নিয়ে নেওয়া হয়। তবে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসার সেই জিনিস গুলোর  একটি তালিকা তৈরী করার পর আটক হওয়া ব্যক্তির কাছ থেকে সাক্ষর নেওয়া হয়। এই সাক্ষর দেওয়ার সময় তালিকাটি অবশ্যই পড়ে নেওয়া দরকার।


—পুলিশ অফিসারের কাছে কোন প্রকার বিবৃতি দিলে তা ভালভাবে পড়ে  বা উক্ত বিবৃতির ভাষ্য অবগত হয়ে তারপর এতে স্বাক্ষর দেওয়া উচিত।


—গ্রেফতার করার পর যদি আইনজীবী বা পরিবারের কেউ গ্রেফতারের বিষয়টি জানতে না পারে তাহলে আদালতে হাজির হওয়ার পরে ম্যাজিস্ট্রেটকে সরাসরি এই বিষয়টি জানানো দরকার। কারণ তাতে আইনি সহযোগিতা পাবার সুযোগ তৈরী হয়।


—গ্রেফতার হওয়ার পর কোন পর্যায়ে শারীরিক  বা মানুষিক নির্যাতনের শিকার হলে বা  অসুস্থ হয়ে গেলে  আদালতের মাধ্যমে বা নিজেই মেডিকেল চেকআপ করে  নেওয়া যায়। চেকআপ করিয়ে নিলে এই রিপোর্টটি নিজ সংগ্রহে রাখা উচিত। অবশ্যই চেকআপ করা ডাক্তারের পরিচয় জানা উচিত। কারণ পরবর্তীতে তা কোনো কারণে প্রয়োজন হতে পারে।


—পুরাতন কোন মামলায় আটক হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব  ঐ মামলার নম্বর ও কাগজপত্র নিয়ে আদালতে  জামিন শুনানীর চেষ্টা করতে পারেন।


—নতুন কোন মামলা বা কার্যবিধির ৫৪ ধারায় আটক হয়ে গেলে একজন আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করার মাধ্যমে জামিন শুনানীর চেষ্টা করতে পারেন।


সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, পুলিশ প্রশ্ন করলে আপনি কী উত্তর দিবেন?


—পুলিশের মৌখিক প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই  আপনাকে অনেক সাবধান থাকতে হবে। আপনাকে স্বাভাবিক এবং বন্ধুত্বসুলভ প্রশ্ন করা হবে।  প্রশ্ন করা হতে পারে আজকের দিনের আবাহাওয়া অথবা আপনার পরিবার নিয়ে। কিন্তু উত্তর দেবার পূর্বে অবশ্যই আপনি  চিন্তা করে নিবেন যেন এই উত্তরগুলো আদালাতে আপনার বিপক্ষে উপস্থাপন  না করা  হয়। মনে রাখবেন, পুলিশের প্রশ্ন করার কারণ হচ্ছে  আপনাকে চালান করে দেবার জন্য কারন খুঁজে বের করা আনা। ফৌজদারি বিধির ৩৩ (১)নং ধারা অনুযায়ী  আপনি আলোচনার বা পরামর্শের জন্য আপনার সুবিধানুযায়ী  যেকোন আইনজীবীর সাঙ্গে যোগাযোগ বা কথা বলতে পারেন।


—যদি কোন পুলিশ অফিসার  আপনার কাছ থেকে কোনো বর্ণনা জানতে চায় তাহলে  আপনি শুধুমাত্র  আপনার পরিচয় যেমন, নাম ঠিকানা ইত্যাদি বলবেন এবং উক্ত পুলিশের নামটা দেখে নিবেন। অন্য  প্রশ্নের উত্তর কোর্ট ছাড়া আপনি আপনার আইনজীবীসহ কাউকে  দিবেন না, এটা আপনার অধিকার। ফৌজদারি বিধির ৩৩(১) নং ধারা অনুযায়ী  আপনি আলোচনা বা পরামর্শের জন্যে আপনার সুবিধানুযায়ী  যেকোনো আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। আপনি পুলিশকে যা-ই বলুন না কেন, তা আপনার বিপক্ষে ব্যবহার করা হতে পারে। 

★অন্য যে কোন প্রশ্নের উত্তর নিচের মত করে দিতে পারেন।


প্রশ্নঃ আপনার নাম কী?

উত্তরঃ মো: সালাউদ্দিন মিয়া।


প্রশ্নঃ আপনার পিতার নাম কী?

উত্তরঃ কলিমুদ্দিন মিয়া!


প্রশ্নঃ আপনাকে ঢাকার মিরপুর থেকে আটক করা হয়েছে, বিকেল বেলায় আপনি মিরপুরের কোথায় ছিলেন?

উত্তরঃ আমি কোর্টে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেব।


প্রশ্নঃ আপনি বিকেল বেলায় কীভাবে মিরপুর  গেলেন?

উত্তরঃ- আমি শুধু কোর্টেই  বলব।


আপনি কি বাসা হতে ইন্টারনেট ইউজ করেন?

উত্তরঃ- আমি  কোর্টে এই প্রশ্নের উত্তর দেব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ