অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে পড়লে কী করবেন?
![]() |
| তীব্র গরম |
সব বয়সের মানুষ তীব্র গরমের কারণে অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন
যেকোনো বয়স এর মানুষ মাত্রাতিরিক্ত গরমের ফলে অসুস্থ হতে পারেন,
ঠান্ডা বা গরম যেই তাপমাত্রা হোক না কেন, মানুষের দেহের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ায় তার নিজ তাপমাত্রা সাধারণত ৩৭.৫ ডিগ্রী তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট রাখতে চায়।
দেহের তাপমাত্রার কমবেশির কারণেই শুধু মানুষ জাগতিক কাজ কর্ম করে থাকে।
কিন্তু সূর্যের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে মূল তাপমাত্রা নির্দিষ্ট একটি মাত্রায় ঠাণ্ডা রাখার জন্যে দেহকে বাড়তি কিছু কাজ করার প্রয়োজন হয়।
এর কারণে ত্বকের কাছে থাকা রক্তবাহী ধমনীগুলো অতিরিক্ত তাপ চতুর্দিকে ছড়িয়ে দিতে বেশি কাজ করতে শুরু করে, আর তখনই শরির থেকে ঘাম বের হতে শুরু করে।
সে শ্বেতবিন্দুর সঙ্গে শরীর থেকে ক্রমে তাপ বেরিয়ে যেতে থাকে।
★কখন সমস্যা হয়?
শুনতে খুবই সাধারণ শোনা গেলেও, দেহের জন্যে বিষয়টি মোটেও সহজ নয়। যত বেশি গরম, মানুষের শরীরের জন্যে তা সামলিয়ে নেয়া তত কঠিন।
মাত্রাতিরিক্ত গরমের ফলে কারো কারো হিট স্ট্রোক হতে পারে
ত্বকের নিচে থাকা ধমনীগুলি যখন খুলতে শুরু করতে থাকে, তখন রক্তের চাপ কমে যায় এবং হৃদপিণ্ডের কাজকে বাড়িয়ে দেয়।
দেহের সবজায়গায় রক্ত পৌঁছিয়ে দিতে গিয়ে তখন হৃদপিণ্ডকে খুব তাড়াতাড়ি অনবরত পাম্প করে যেতে হয়।
এর কারণে শরীরের মধ্যে হালকা র্যাশ/ দানার মত দেখা দিতে পারে।
মানে, ছোট ছোট ফুসকুড়ির মতন হয় যা চুলকানি হতে পারে।
অথবা কারো কারোর পা ফুলে যেতে পারে।
কিন্তু, রক্তচাপ খুব কমে গেলে হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।
সেই অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়তে পারে।
★এই গরমে যা যা করবেন....
গরমে বিভিন্ন রকমের সমস্যা ও অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।
এর সাথে আরও দেখা দিতে পারে অন্য কিছু উপসর্গ,
যেমন,
---মাথাঘোরা, মাথাব্যথা , অজ্ঞান হয়ে যাওয়া , বমি বমি ভাব, মাংসপেশিতে খিচুনি ধরা, ক্লান্ত হয়ে পড়া, অবসাদ এবং মনের মধ্যে দ্বিধার ভাব হওয়া।
কাউকে অতিরিক্ত গরমে খুব অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখলে আপনার কী করা উচিত?
তিব্র গরমে কাউকে খুব অসুস্থ হয়ে যেতে দেখলে প্রথমেই তাকে আধঘন্টা ঠাণ্ডাতে রাখতে হবে।
যদি এতে তিনি সুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে বুঝবেন , অসুস্থতা তেমন গুরুতর নয়।
তীব্র গরমের কারণে কাউকে অসুস্থ হয়ে যেতে দেখলে কী করতে হবে, সেই বিষয়ে ব্রিটেনের ন্যাশনাল স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কিছু পরামর্শ প্রদান করেছে ।
• অসুস্থ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঠাণ্ডা জায়গায় নিয়ে শুয়ে দিতে হবে।
• শুইয়ে দিয়ে তার পা খানিকটা ওপরে তুলে দিতে হবে
• প্রচুর পরিমানে পানি বা পানীয় পান করানোর ব্যবস্থা করতে হবে, বিষেশ করে পানিশূন্যতা দূর করার যে পানীয় তা দেয়া যেতে পারে।
• সেই ব্যক্তির ত্বক বাতাসে ঠান্ডা করার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে, কাপড় ভিজিয়ে বা ভেজা স্পঞ্জ দিয়ে শরির মুছে দেয়া যেতে পারে ।
হাতের বগলের নিচে, গলায় ও ঘাড়ে ঠাণ্ডা পানি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
কিন্তু আধঘন্টার মধ্যে যদি সেই ব্যাক্তি সুস্থ না হয়ে যায়, তাহলে ঐ ব্যক্তির হিট স্ট্রোক হওয়ার আশংকা থাকবে।
আর সময়ক্ষেপণ না করে তক্ষুনি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। হিটস্ট্রোক হলে মানুষের শরির থেকে ঘাম বের হওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
সেক্ষেত্রে এই ব্যক্তি অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে ।
★গরমে কাদের ঝুঁকি বেশি?
অতিরিক্ত গরমের করণে স্বাস্থ্যবান মানুষের হিট স্ট্রোক হয়ে যাওয়ার আশংকা খুবই কম। কিন্তু আবার কেউ কেউ মারাত্মক অসুস্থ হবার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
শুরুতেই বৃদ্ধ এবং আগে থেকেই যাদের অসুস্থতা আছে, তাদের অসুস্থ হবার আশংকা অন্যদের চাইতে একটুখানি বেশি।
যাদের দেহে ডায়াবেটিস টাইপ ওয়ান অথবা টু, আছে তাদের দেহ দ্রুত পানি শূণ্য হয়ে যায়, এবং কিছু বিশেষ জটিলতা দেখা দিতে পারে ।
তাছাড়া শিশু বাচ্চাদের খুবই কষ্ট হয় তীব্র গরমে।
অনেক সময় বাচ্চারা নিজেদের অস্বস্তির কথা ভালভাবে বুঝিয়ে বলতে পারে না, যার ফলে তাদের মা-বাবারা সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না।
ওষুধ সেবনের কারণে কি ঝুঁকি বাড়ে?
উত্তর- হ্যাঁ।
কিন্তু সাধারণত মানুষ কোন নির্দিষ্ট সমস্যার কারণেই ওষুধ খায়, ফলে তাদের দেহ ঠাণ্ডা রাখতে তাদের ভিন্ন রকম ব্যবস্থার কথা ভাবতে হয়।
হার্ট-অ্যাটাক অথবা হিট-স্ট্রোক ছাড়াও আরও বিভিন্ন রকমের জটিলতার মধ্যে পড়ে মানুষের শরীর।
যেমন, পানি ছাড়াও শরীর থেকে নানা রকমের খনিজ উপাদান ঘামের সাথে বেরিয়ে যায় ।
কিছু কিছু রোগের ওষুধ,
যেমন মৃগীরোগ ও পারকিনসন্সরোধী ওষুধ সেবনের ফলে গরম আরও বাড়তে পারে।
তাছাড়া লিথিয়াম যুক্ত ওষুধ সেবনের ফলে বাড়তে বাড়ে গরমের বোধ।
★গরমে কি মানুষ মারা যায়?
উত্তর - হ্যাঁ। সমগ্র পৃথিবীতেই গরমের ফলে মানুষের মৃত্যুর সংবাদ শোনা যায়।
ব্রিটেনে প্রতি ১ বছরে
প্রায় ২০০০ এর বেশি মানুষ মারা যায় গরমের কারণে ।
পুরানো রেকর্ড দেখলে দেখা যায় যে তাপদাহ শুরু হবার প্রথম ২৪ ঘণ্টাতে মানুষ বেশি মারা যায়।
২০০৩ সালে ইউরোপে তাপদাহের কারণে প্রায় ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল।
★তাপদাহ চলাকালীন সময়ে কী করা উচিত?
যা করবেন তা একেবারে সাদামাটা---ঠাণ্ডা থাকার চেষ্টা করুন আর দেহে পানিশূন্যতা একেবারে হতে দেবেন না।
গরমের সময় রোদ্রের মধ্যে কাজ করবেন না এবং অধিক পরিশ্রমের কাজ থেকে বিরত থাকবেন ।
ঘরের মধ্যে দিনের বেলায় পর্দা টেনে দিবেন। গরমের সময় প্রচুর পরিমাণে পানি এবং দুধ পান করার চেষ্টা করুন।
সাধারণত দিনের বেলায় গরম একটু বেশি হয়। কিন্তু রাতের বেলার অতি গরমও দেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর।


0 মন্তব্যসমূহ